অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : জার্মানির কোলন বিশ্ববিদ্যালয় ন্যান্সি ফ্রেজার নামের একজন দার্শনিক ও তাত্ত্বিক বা চিন্তাবিদকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলবার্তুস-ম্যাগনুস-চেয়ারে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।
কিন্তু ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলায় ও ইসরাইলের নিন্দা করায় ওই পদে যোগদানের জন্য তাঁকে পাঠানো আমন্ত্রণ-পত্রটি ফিরিয়ে নিয়েছে তথা বাতিল করেছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান বা কর্তৃপক্ষ।
ইহুদিবাদী ইসরাইল চরম ফ্যাসিবাদী কায়দায় ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যাসহ নানা পৈশাচিক অপরাধ চালিয়ে যেতে থাকায় বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব প্রতিবাদে সোচ্চার হচ্ছেন। দার্শনিক ও তাত্ত্বিক ন্যান্সি ফ্রেজারও তাঁদের একজন।
মিসেস ন্যান্সি ফ্রেজার সমালোচনামূলক এবং মার্কসবাদী তত্ত্বের অন্যতম বিখ্যাত দার্শনিক, যিনি এটিকে নারীবাদের সাথে সংযুক্ত করেছেন।
গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে জার্মানিতে বাক-স্বাধীনতা কঠোরভাবে সীমাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। এমনকি দেশটির শিক্ষাঙ্গনও এই নিষেধাজ্ঞার আওতা থেকে মুক্ত নয়। অবশ্য এর আগেও জার্মানিতে ও এর শিক্ষাঙ্গনে ইহুদিবাদী ইসরাইলের সমালোচনা এবং এই অপরাধী চক্রকে বয়কটের প্রচেষ্টা সহ্য করা হত না। ফ্রান্স, ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতেও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। অথচ এইসব দেশের সরকারগুলো বাক-স্বাধীনতার ঘোর সমর্থক বলে দাবি করে থাকে!
ইসরাইলি পৈশাচিকতা ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে কথা বলায় প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক রেপোর্টিয়ার বা প্রতিবেদক। এ দু’জনও নারী হওয়ায় তারা হুমকির মুখে খুবই ভীত-সন্ত্রস্ত হবেন বলে হয়তো ভেবেছে ইসরাইলি সন্ত্রাসী চক্র ও এর সহযোগী বলয়ের লোকেরা।
[সম্প্রতি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সংস্কৃতি ও ইসলামি দিকনির্দেশনা বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মাদ মাহদি ইসমাইলি বলেছেন, মার্কিন সরকারের নেতৃত্বে পশ্চিমা কোনো কোনো দেশ নিজেদেরকে মানবাধিকারের ধারক-বাহক হিসেবে তুলে ধরে নিজেদের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। কিন্তু এরাই আসলে ন্যায়কামী জাতিগুলোর শত্রু। এরাই অন্য দেশ ও জাতির ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিচ্ছে, মানুষ হত্যা করছে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করছে। এ প্রসঙ্গে তিনি গাজায় আমেরিকার পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতায় চলমান গণহত্যার কথা তুলে ধরেন।
ইরানের সংস্কৃতি মন্ত্রী আরও বলেন, গাজা তথা ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বললে তা প্রকাশের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। মার্কিন সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে সব সময় মিথ্যাচার করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেবল ততক্ষণ পর্যন্তই তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য ও প্রশংসনীয় যতক্ষণ এটি তাদের নিপীড়নমূলক নীতির প্রতি আঘাত না করে। মজলুম ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দৃঢ় সমর্থন এবং মার্কিন সমর্থিত ইহুদিবাদী ইসরাইলের তীব্র নিন্দা জানানোর পর সামাজিক মাধ্যমে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর তথ্য কেন্দ্রের পেজগুলো বন্ধ করে দিয়েছে মার্কিন কোম্পানি মেটা। মার্কিন সরকার যে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয় তা এই ঘটনার মধ্যদিয়ে প্রমাণিত হয়েছে।
সর্বশেষ সংবাদে জানা গেছে, গাজায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের জাতিগত শুদ্ধি অভিযান বা গণহত্যায় শহীদ ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৩৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং আহত হয়েছেন ৭৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এ ছাড়াও নিখোঁজ রয়েছেন প্রায় ৭ হাজার ফিলিস্তিনি। শহীদ ও হতাহতদের প্রায় ৭০ শতাংশই শিশু ও নারী।
অবৈধ ইহুদিবাদী ইসরাইল সরকারের রূপরেখা গড়ে তোলা হয় ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদী ষড়যন্ত্রের আওতায় এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদিদেরকে ফিলিস্তিনে মুহাজির হিসেবে পাঠিয়ে। ১৯৪৮ সালে এর অস্তিত্ব ঘোষণা করা হয় আনুষ্ঠানিকভাবে। আর সেই সময় থেকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান বা গণহত্যার নানা ষড়যন্ত্র কার্যকর করে আসছে ইহুদিবাদীরা যাতে গোটা ফিলিস্তিনকে দখল করতে পারে ইহুদিবাদী ইসরাইল। ইহুদিবাদী ইসরাইল নানা অজুহাতে গাজা উপত্যকাকেও স্থায়ীভাবে দখল করার বা নিয়ন্ত্রণে রাখার ষড়যন্ত্র করছিল বলে নানা খবর এসেছে। গাজা-সংলগ্ন সাগরে ও সাগর-উপকূলে গ্যাস ও তেলের খনি রয়েছে এবং এসব খনিতে গ্যাস ও তেলের ব্যাপক মজুদ রয়েছে বলে মনে করা হয়।
Leave a Reply